1. ajkerfaridpur2020@gmail.com : Monirul Islam Titu : Monirul Islam Titu
  2. jmitsolution24@gmail.com : support :
  3. titunews@gmail.com : Monirul Islam Titu : Monirul Islam Titu
পাঁচ পার্সেন্ট না দিলেই মিলছে না সালথায় এলজিইডির ফাইলে সই
সোমবার, ০৫ জুন ২০২৩, ১১:৪৫ পূর্বাহ্ন
নোটিশ বোর্ড :
আজকের ফরিদপুর নিউজ পোর্টালে আপনাদের স্বাগতম । করোনার এই মহামারীকালে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখুন। সচেতনে সুস্থ থাকুন।

পাঁচ পার্সেন্ট না দিলেই মিলছে না সালথায় এলজিইডির ফাইলে সই

  • Update Time : বৃহস্পতিবার, ২৫ মে, ২০২৩
  • ১৩ জন পঠিত
পাঁচ পার্সেন্ট না দিলেই মিলছে না সালথায় এলজিইডির ফাইলে সই
পাঁচ পার্সেন্ট না দিলেই মিলছে না সালথায় এলজিইডির ফাইলে সই

মনির মোল্যা, সালথা : ফরিদপুরের সালথায় স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) তত্ত্বাবধানে বিভিন্ন প্রকল্পের কাজে ব্যাপক অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। বিভিন্ন গ্রামগঞ্জের রাস্তা-ঘাট, ব্রিজ-কালভার্ট ও স্কুলের ভবন নির্মাণে এসব অনিয়ম হচ্ছে বলে অভিযোগ। ফলে ভাল মানের কাজ না হওয়ায় কিছুদিন পরপর সংস্কার করতে হচ্ছে। এদিকে উপজেলা প্রকৌশলী কার্যালয়ের (এলজিইডির) একজন অফিস সহকারীর মাধ্যমে প্রতিটি উন্নয়ন কাজের বরাদ্দ থেকে শতকরা পাঁচ পার্সেন্ট টাকা উৎকোচ নেওয়া হয় বলে অভিযোগ করেন একাধিক ঠিকাদার।

সম্প্রতি বেশ কয়েকটি প্রকল্পে গিয়ে খোজ নিয়ে অনিয়মের সত্যতা পাওয়া গেছে। উপজেলার যদুনন্দী নবকাম পল্লী কলেজের জন্য এলজিইডির তত্ত্বাবধানে ২০২২ সালে ১৫ লাখ ৬৫ হাজার ৫৮১ টাকা ব্যয়ে একটি ঘাট বরাদ্দ দেওয়া হয়। টেন্ডারের মাধ্যমে ওই ঘাটের কাজটি পান ফরিদপুরের দাদা এন্টার প্রাইজ নামে একটি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান। কিন্তু বুধবার (২৪ মে) সরেজমিনে ওই কলেজে গিয়ে ঘাটের কোনো অস্তিত্ব খুজে পাওয়া যায়নি। কলেজের অধ্যক্ষ মো ওবায়দুর রহমান বলেন, আমি ২০১৫ সালে যোগদানের পর কলেজের নামে কোনো ঘাট বরাদ্দ হয়নি।

তবে কিছুদিন আগে এলজিইডির অফিস থেকে উপ-সহকারী প্রকৌশলী হাফিজুর রহমান একটি চিঠি নিয়ে কলেজে এসে আমাকে বলেন, আপনার কলেজে একটি ঘাট আছে, ওই ঘাটের অবশিষ্ট অংশের রাস্তা নির্মাণের জন্য এক লাখ টাকা বরাদ্দ আসছে। তখন আমি তাকে বললাম, আমাদের কলেজে তো কোনো ঘাট নেই। এরপর তিনি চলে যান। পরে সেই এক লাখ টাকার রাস্তা কোথায় নির্মাণ করেছে তাও আমি জানি না। তবে কলেজের উপাধ্যক্ষ মো. মিজানুর রহমান বলেন, শুনেছি ঘাটটি কলেজের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি মিঞা লুৎফুর রহমানের বাড়ির সামনে নির্মাণ করা হয়েছে। এলজিইডি অফিস ম্যানেজ করে ঘাটটি ওইখানে নির্মাণ করা হয়েছে।

যদিও এলজিইডি অফিস দাবি করছে, কলেজের কোয়াটারের জন্য ঘাট বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। তবে কোয়াটারের জন্য ঘাট বরাদ্দ দেওয়া হলেও কাজ শেষে কলেজের অধ্যক্ষের কাছে হস্তান্তর করার কথা। অভিযোগ রয়েছে, অধ্যক্ষের সই জাল করে কলেজের ঘাটকে কোয়াটার ঘাট হিসেবে হস্তান্তর দেখানো হয়েছে। ঘাট নির্মাণ কাজের ঠিকাদার লিটন শেখ বলেন, অফিস আমাকে যেখানে ঘাট নির্মাণ করতে বলেছে, আমি সেখানে নির্মাণ করেছি। এখানে দোষ থাকলে, আছে অফিসের। জানা গেছে, ৭১ লাখ ৬৬ হাজার টাকা ব্যয়ে চান্দাখোলা বিনাজদিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দোতলা ভবন নির্মাণ কাজ চলছে। কাজটি নির্মাণের দায়িত্ব ফরিদপুরের ইকবাল এন্ড ব্রাদার্স নামে একটি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান পেলেও বিল্লাল হোসেন নামে এক ব্যক্তি কাজটি করছেন।

২০২২ সালের জানুয়ারী মাসে এ ভবনের কাজ শেষ করার কথা থাকলেও এখনো শেষ হয়নি। অভিযোগ রয়েছে, ভবন নির্মাণে নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহার করা হচ্ছে। ভবনের পিলার ও ভিম আকাবাকা দেখা গেছে। ওই বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. সিদ্দিকুর রহমান বলেন, কাজের ইস্টেমেট আমাদের দেয়নি। আমি দুই দিন অফিসে গিয়ে ইস্টেমেট চেয়েও পায়নি। তো কিভাবে কাজ বুঝে নেব। তবে কাজ কেমন হচ্ছে, এ প্রশ্নের উত্তর দিতে রাজি হননি তিনি। বাহিরদিয়া মাদরাসার পাশে ৪০০ মিটার একটি কার্পেটিং সড়ক নির্মাণ কাজ গত শনিবার শেষ হয়।

সড়কের পাশের বাসিন্দা আতিয়ার রহমান ও শহিদুল ইসলাম বলেন, গত তিন মাস আগে নিম্নমানের খোয়া বিছিয়ে তার ওপর কেরোসিন তেল ও পোড়া মবিল ছিটিয়ে রেখে যায়। গত শনিবার হঠাৎ এসে সেই পোড়া মবিল ও কেরোসিন তেলের ওপর হালকা ঝাড়–দিয়ে কয়েক মধ্যে কার্পেটিং কাজ শেষ করেন ঠিকাদারের লোকজন। এ সময় আমরা অভিযোগ করলেও কেউ আমলে নেয়নি। কাজে নিম্নমানের বিটুমিন, পাথর, সুড়কিসহ অন্যান্য উপকরণ ব্যবহার করা হয়েছে। বিটুমিন কম দেওয়ায় কার্পেটিং করার পর পাথরগুলো ভেসে রয়েছে। স্থানীয়দের অভিযোগ, ছোট একটি সড়কে যদি এতো অনিয়ম করা হয়, তাহলে বড় বড় সড়ক নির্মাণে তারা কি করে। অনিয়মের কারণে ভাল মানের কাজ না হওয়ায় কিছুদিন পরপর সংস্কার করতে লাগে।

এদিকে খারদিয়া ও সোনাপুরের পালপাড়ার মাঝে নদীর ওপর প্রায় ৫ কোটি টাকা ব্যয়ে একটি ব্রিজের কাজ টানা কয়েক মাস বন্ধ থাকার পর কিছুদিন ধরে আবার কাজ শুরু হয়েছে। যুদনন্দী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভবনের নিচের ভিম ঢালাই না দিয়ে ইট দিয়ে গাথা হয়। পরে অভিযোগের প্রেক্ষিতে ইটের গাথুনি ভেঙ্গে নতুন করে ঢালাই ভিম নির্মাণ করা হয়। এ ছাড়া উপজেলার বেশিভাগর রাস্তা-ঘাট, ব্রিজ-কালভার্ট ও স্কুলের ভবন নির্মাণে একইভাবে অনিয়ম করা হচ্ছে বলে অভিযোগ স্থানীয়দের।

উল্লেখিত কাজের তদারকির দায়িত্বে রয়েছেন মো. কাইয়ুম হোসেন নামে সালথার একজন উপ-সহকারী প্রকৌশলী। তিনি টাকা ছাড়া কিছুই বুঝেন না বলে অভিযোগ করেছেন ঠিকাদাররা। ঠিকমতো কাজের সাইটেও যান না। অথচ কৌশলে বড় বড় কাজের তদারকির দায়িত্ব নেন। কাজ কেমন হলো তা নিয়ে তার কোনো মাথা ব্যথা নেই। শুধু নিজের পকেটভারি করার জন্য সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারের সাথে যোগসাজশে কিভাবে অনিয়ম করা যায় সেদিকে নজর তার।

অভিযুক্ত উপ-সহকারী প্রকৌশলী মো. কাইয়ুম হোসেন তার দায়িত্বে থাকা কাজে অনিয়মের বিষয় বলেন, নবকাম কলেজের ঘাট অনেকদিন আগে হয়েছে। এটা নিয়ে লেখালেখির করার কি আছে। চান্দাখোলা-মিনাজদিয়া স্কুল ভবনের পিলার ও ভিম কিছুটা আকাবাকার হলেও কাজ ভাল হচ্ছে। তবে বাহিরদিয়া সড়ক নির্মাণে অনিয়মের বিষয় তিনি এড়িয়ে যান। ওই সড়কের কোনো তথ্যও তিনি দেননি। নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক ঠিকাদার অভিযোগ করে বলেন, সালথায় কাজ করলে এলজিইডির অফিসে পাঁচ পার্সন্ট টাকা কমিশন দেওয়া লাগে। অফিস সহকারি মো. বাবুল হোসেন কমিশনের টাকা নেয়। কমিশনের টাকা আদায়ের জন্য তিনি একটা খাতাও বানিয়েছেন। যে কমিশনের টাকা না দেন, তার বিলের কাগজে সই করা হয় না।

এমনকি জামানতের টাকা উত্তোলন করতে গেলেও অফিসে টাকা দিতে হয়। কমিশন নেওয়ার বিষয় অফিস সহকারী বাবুল হোসেনের কাছে জানতে চাইলে তিনি প্রথমে বলেন, ঠিাকাদার তো পার্সেনটিস দেয়ই, তাতে সমস্যা কি। কোন নিয়মে পার্সেনটিস নেন- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, কোনো নিয়ম আছে নাকি আবার, কমিশন তো নেওয়াই লাগে। কেউ দেয়, কেউ দেয় না। তবে পরে আবার তিনি কমিশন আদায়ের বিষয়টি অস্বীকার করে বলেন, কোন ঠিকাদার কমিশন দেয়, তাকে নিয়ে আসেন আমার সামনে। তবে কমিশন নেওয়ার বিষয়টি স্বীকার করে একজন উপ-হসকারী প্রকৌশলী জানান, কমিশনের টাকা ভাগাভাগি হয়। এই টাকা বাবুল সাহেব খান না।

উপজেলা প্রকৌশলী মো. আবু জাফর মিয়া বলেন, ঘাট নির্মাণের বিষয় আমি কিছু জানি না। আমি কয়েক মাস ধরে এসেছি। আর স্কুলের কাজ ভাল হচ্ছে আমার জানামতে। হয়তো কাঠের সাটারিং করে ঢালাই দেওয়ার কারণে একটু আকাবাকা হতে পারে। যা পরে ঠিক করা যাবে। তবে অনিয়ম হলে স্কুল কর্তৃপক্ষ আমাদের না জানিয়ে আপনাদের কেন জানায়। আমাদের জানালে তো আমরা ব্যবস্থা নিতে পারি। আর বাহিরদিয়ার সড়কে অনিয়মের বিষয় আমি নিজে গিয়ে দেখবো। তারপর বক্তব্য দিব। তবে উপজেলা প্রকৌশলী কোনো কাজের তথ্য দিতে অনীহা প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, অনিয়ম হলে আমি ব্যবস্থা নিচ্ছি।

ফরিদপুর এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী মো. শহিদুজ্জামান খান বলেন, সালথায় উপজেলা পরিষদের একটা নিজস্ব একটা ফান্ড আছে। ওই ফান্ডের টাকায় স্কুলের কাজ হয়। পরিষদ থেকেই টেন্ডার হয়। অতএব উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও উপজেলা প্রকৌশলী সব জানেন। তারাই এসব বিষয় বলতে পারবেন। কমিশন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, কমিশন কে নেয় আর কমিশনের টাকা কে কাকে দেয় সে বিষয়টিও তারা জানেন। এসব বিষয় আমার কোনো বক্তব্য নেই। সালথা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আক্তার হোসেন শাহিন বলেন, ঘাটের বিষয়টি আমার জানা নেই। স্কুলের ভবনের অনিয়মের বিষয়টি খোজখবর নিচ্ছি। আর এলজিইডি অফিসে ৫% টাকা কমিশন নেওয়ার বিষয়টি ঠিকাদাররা যদি আমাকে জানায়, তাহলে আমি ব্যবস্থা নেব।

সংবাদটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই ক্যাটাগরির আরো সংবাদ
© পদ্মা বাংলা মিডিয়া হাউজের একটি প্রতিষ্ঠান
Design & Developed By JM IT SOLUTION