1. ajkerfaridpur2020@gmail.com : Monirul Islam Titu : Monirul Islam Titu
  2. jmitsolution24@gmail.com : support :
  3. titunews@gmail.com : Monirul Islam Titu : Monirul Islam Titu
সাধারণ হয়েও অসাধারণ ‘ডক সাহেব’
সোমবার, ২৭ মার্চ ২০২৩, ১২:১৫ অপরাহ্ন
নোটিশ বোর্ড :
আজকের ফরিদপুর নিউজ পোর্টালে আপনাদের স্বাগতম । করোনার এই মহামারীকালে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখুন। সচেতনে সুস্থ থাকুন।

সাধারণ হয়েও অসাধারণ ‘ডক সাহেব’

  • Update Time : বুধবার, ৮ মার্চ, ২০২৩
  • ৩১ জন পঠিত
সাধারণ হয়েও অসাধারণ ‘ডক সাহেব’
সাধারণ হয়েও অসাধারণ ‘ডক সাহেব’

স্টাফ রিপোর্টার : একটি সময় বিস্ময়কর চরিত্র মনে হলেও কার্যত এখন মানুষের কাছে ‘ডক সাহেব’ একজন আধ্যাত্মিক পুরুষ হিসেবে সমাদৃত। ডক সাহেবের নামে তাদের কাছে রয়েছে নানা ধরনের স্মৃতিময় বর্ণনা যেগুলি অনেকের কাছে অবিশ্বাস্য ও মনে হতে পারে। তবে মানুষ এবং সমাজের সেবা করতে যেয়ে তিনি যে একজন নিবেদিত প্রাণ হিসেবে কাজ করে গেছেন সেটি কেউই অস্বীকার করতে পারবেন না। অনেকের মতে, অতি সাধারণ জীবনযাপন আর সমাজ ও মানবকল্যাণে নিবেদিত হয়ে তিনি মহান সৃষ্টিকর্তার প্রতি প্রেমের এক অনন্য নজির স্থাপন করেছেন। যা তার জীবদ্দশাতেই মানুষের মুখে মুখে রুপকথার গল্পের মতো ফিরে ফিরে আসে। ফরিদপুর জেলার আলফাডাঙ্গা পৌরসভার ইছাপাশা গ্রামের মরহুম নূরুল হক মুন্সি ও মরহুমা রহিমা বেগমের সন্তান মো. আব্দুল খালেক মুন্সি। পরবর্তীতে তিনি নিজেই নিজের নাম বদলে রাখেন ‘ডিরেক্টর অব সেন্ট্রাল কিংডম’ যার সংক্ষিপ্ত রুপ হলো এই ‘ডক সাহেব’। প্রায় একশো বছর আগে তার জন্ম। কুষ্টিয়া কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পাশের পর তিনি ইন্ডিয়ান কোর্সে পিটিআই সম্পন্ন করেন। বাংলার পাশাপাশি ইংরেজি, উর্দু ও আরবি ভাষায় তার বিশেষ দক্ষতা রয়েছে। ডক সাহেবের শৈশবের স্মৃতি জানা যায়নি। তবে পারিবারিকভাবেই অবস্থাসম্পন্ন তিনি। যদিও তাকে দেখে মোটেও তা মনে হবেনা কারো। আলোচিত এই মানুষটি দেখতে নিতান্তই অতি সাধারণ।

গতানুগতিক আধ্যাত্মিক সাধকদের মতো তার বেশভূষা নেই। বরং বলতে হয় পোষাকাদি বা বিলাসী জীবনের বিপরীতেই তার দারুণ মোহ। সাধারণ মানুষের মতোই চলাফেরা করেও যিনি কর্মগুণে হয়ে উঠেছেন অসাধারণ। চলতি পথে মানুষের জন্য অকাতরে বিলিয়ে দিয়েছেন যা পেয়েছেন তার সবটুকুই। রাস্তাঘাটে আবর্জনা সরিয়েছেন, বাজারের ড্রেন-নর্দমা পরিস্কার করেছেন নিজের হাতে। হাটতে হাটতেই চোখের সামনে থেকে সরে গেছেন দূরে কোথাও। আবার চলার পথে হিন্দু-মুসলিম নির্বিশেষে মানুষের সমস্যা লাঘবে কাজ করেছেন কোন কিছুর বিনিময় ছাড়াই। ডক সাহেবকে নিয়ে মানুষের মাঝে অনেক প্রচলিত বর্ণনাও রয়েছে লোকগাঁথা হয়ে। এর একটি হলো, তিনি একবার টেনে কালুখালী যেতে চাইছিলেন কিন্তু টিকেট কাটার মতো অর্থ না থাকায় তাকে টেনে নেওয়া হয়নি। ‘আমার কাছেতো টাকা নেই, তোরা আমাকে ট্রেনে নিবি?’ তাকে না নিয়েই ছেড়ে গিয়েছিলো সেই ট্রেন। এরপর কালুখালী নেমে পরিচিতরা তাকে তাদের আগেই সেই স্টেশনে দেখে হতবাক হয়ে পড়েন। এই ঘটনাটি আলফাডাঙ্গা উপজেলাবাসীর কমবেশি প্রায় সবারই জানা। আরেকটি ঘটনা জানা যায় রমজান মাসের। তাকে জব্দ করতে তার বিরুদ্ধবাদীরা রোজাদারদের দাওয়াত দেয় ডক সাহেবের বাড়িতে ইফতারির নেমন্তন্ত্রে। দাওয়াত পেয়ে বিকেল হতেই অনেকে তার বাড়িতে হাজির। ডক সাহেব বাড়ি ছিলেন না। তিনি কিছু জানতেনও না।

তবে ইফতারির সামান্য আগে তিনি ভ্যানভর্তি ইফতার সামগ্রী নিয়ে হাজির। সকলকে আজানের আগেই ইফতারির সময় দেওয়া হলো চিড়া আর গুড়। আর ইফতারির পরে তাদের জন্য তাৎক্ষণিক চুলায় চড়িয়ে দেয়া হলো খিচুড়ি। নামাজ শেষে সকলে মিলে আহার করলেন সেসব। এছাড়া চলতি পথে মানুষকে নামমাত্র মূল্যে বস্ত্র বিতরণ, অনাহারীর বাড়িতে খাবার পৌঁছে দেয়া, অসুস্থ্যের সুশ্রষা করা, অসহায়ের পাশে দাড়ানোর মতো অসংখ্য বর্ণনা রয়েছে মানুষের মুখে মুখে। মানুষের মুখ থেকেই জানা যায়, ডক সাহেব নিজে দরিদ্রদের মাঝে কম দামে লুঙ্গি বিলিয়েছেন, খাবার বিলিয়েছেন। মানুষের বিপদেআপদে তাদের জন্য কাজ করেছেন। তাদের পাশে থেকেছেন। এখন মানুষ দূরদূরান্ত হতে তার দোয়া নেয়ার জন্য ছুটে আসেন। হিন্দু-মুসলিম ধর্মবর্ণ নির্বিশেষে তার কাছে ছুটে আসেন মানুষ। বাড়ির পাশে তিনি দরিদ্রদের চিকিৎসা দেন। এজন্য একটি চিকিৎসাকেন্দ্রও গড়ে তুলেছেন। অবশ্য এটি তার নিজস্ব চিকিৎসা পদ্ধতি। একটি পাকা মসজিদও নির্মাণ করেছেন।

১৯৭২ সালে নওয়াপাড়ায় তিনি একটি বালিকা বিদ্যালয় গড়ে তুলেছিলেন। কিন্তু পৃষ্ঠপোষকতার অভাবে পাঁচ বছরের মাথায় সেটি বন্ধ হয়ে যায়। ১৯৭৩ সালে ডক সাহেব আলফাডাঙ্গা সদর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। এমন একজন পরোপকারী জনহিতৈষী মানুষটিকে নিয়ে স্থানীয়দের মাঝে অনেক আলোচনা হলেও তিনি লুঙ্গি-পাঞ্জাবি পড়ে গাঁওগেরামে ঘুড়ে বেড়ান অতি সাধারণ হয়ে। অথচ রাস্তাঘাচে এই লোকটির পেছনে হয়তো কখনো দর্শনার্থীদের ভিড় লেগে যায়। কেউ হয়তো তাকে পাগলাটে সাধকও বলতে পারেন। অথচ মানুষটি কতো উদার এবং মানবতার সেবায় নিবেদিত তা হয়তো তার সম্বন্ধে না জানলে কেউ বিশ্বাসও করতে পারবে না। মানুষের মাঝে সচেতনতা তৈরির জন্য তিনি রেলের বিনা টিকেটে ভ্রমনরতদের বিরুদ্ধে নিজ উদ্যোগে অভিযান চালাতেন। উদ্দেশ্য যাতে বিনা টিকিটে ভ্রমনের কারণে কালুখালি-ভাটিয়াপাড়া ট্রেন চলাচল বন্ধ হয়ে না যায়। আলফাডাঙ্গার কুসুমদী গ্রামের হাজী আব্দুল মান্নান মিয়ার কন্যা জয়নাব বেগমের সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ ডক সাহেব পাঁচ সন্তানের জনক। আলফাডাঙ্গার সাধারণ মানুষ তাকে অত্যন্ত শ্রদ্ধার চোখে দেখেন।

পারিবারিকভাবে প্রাপ্ত সম্পদ হতেই তার আয় উপার্জন। বিভিন্ন সময় বিভিন্ন প্রসঙ্গে ছোট ছোট বাক্যে তিনি তার চিন্তাচেতনা প্রকাশ করে থাকেন। ডক সাহেবের মতে, যে জন মানুষ ও জীবের কল্যাণ চায় তিনি মহামানব। তার মতে মানুষের বাহ্যিক রুপ দেখে ধার্মিক বোঝা যায় না। তিনি বলেন, সব ধর্মকে বিশ্বাস করি কিন্তু সব ধার্মিককে নয়। বাস্তবে মানুষ ও সমাজের কল্যাণের জন্য সবসময়ই কিছু করতে তিনি উন্মুখ হয়ে থাকেন। আলফাডাঙ্গা বাজারের রাস্তাঘাট, নর্দমা যেখানেই ময়লা দেখেন নিজে হাতে পরিস্কার করেন। ডক সাহেবকে ভালোবেসে আলফাডাঙ্গা বাজারের অনেক দোকানের নামকরণ তার নামে রাখা হয়েছে। যেমন আলফাডাঙ্গা কলেজ রোডে ডক সাহেব টেইলার্স, ডক সাহেব হোটেল অ্যান্ড রেস্টুরেন্ট, বাসস্ট্যান্ডে ডক সাহেব ইঞ্জিনিয়ারিং ওয়ার্কশপ ইত্যাদি। পাঁচদিনব্যাপী উরস: সূফি ভাবধারায় বিশ্বাসী ‘ডক সাহেব’ গাউসুল আজম বড়পীর হয়রত আব্দুল কাদের জিলানী (রহ.) এর কাদেরিয়া তরিকাপন্থী। প্রায় চার যুগের বেশি সময় ধরে ইছাপাশা গ্রামে গড়ে তুলেছেন ‘বিশ্বস্মৃতি কাদের মঞ্জিল’। প্রতি সপ্তাহের বুধবার সেখানে সাপ্তাহিক জলসা এবং প্রতিবছর ২০ ফাল্গুন হতে ২৪ ফাল্গুন পর্যন্ত পাঁচদিনব্যাপী বাৎসরিক উরস শরীফ অনুষ্ঠিত হয়।

এবারেও গত রোববার থেকে শুরু হয়েছে পবিত্র এ উরস শরীফ। চলবে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত। সংশ্লিষ্টরা জানান, প্রায় অর্ধশত বছর ধরে এই ওরস শরীফ অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে। ধর্মবিশ্বাসী মানুষ তাদের কল্যাণার্থে পরম স্রষ্টা মহান আল্লাহ্? রাব্বুল আলামীনের করুনা, তৎসহ রাসূলে পাক (সঃ) এর মহব্বত এবং ডক সাহেবের ছোহবত, আত্মিক প্রেমপ্রীতি ভালোবাসা এবং দোয়া সকলের অন্তরাত্মায় ধারণ করে দুনিয়া ও পরলৌকিক জগতের অশেষ কল্যাণ হাসিল করার উদ্দেশ্যে উরস শরীফে উপস্থিত হন। পাঁচদিনব্যাপী বিভিন্ন কর্মসূচীর মধ্যে রয়েছে খতমে কোরআন শরীফ, খতমে গাউছিয়া, খতমে খাজেগান শরীফ, ধর্মীয় ভাবসংগীত পরিবেশন, আওলিয়া কেরামের পবিত্র জীবনী আলোচনা, মিলাদ মাহফিল, ছেমা, কিয়াম, ফাতেহা শরীফ পাঠ সহ দেশের সার্বিক কল্যাণ ও শান্তি কামনা করে আখেরি মোনজাত ও তবারক বিতরণ বাৎসরিক ওরশ উদযাপন কমিটির পরিচালক মো. ওয়াহিদুজ্জামান মুন্সী নাঈম জানান, “ইতোমধ্যে সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়েছে। পাঁচদিনব্যাপী বাৎসরিক এই উরস শরীফ সুন্দর ও সুশৃঙ্খলভাবে সম্পন্ন করার লক্ষ্যে বিপুলসংখ্যক স্বেচ্ছাসেবক নিযুক্ত করা হয়েছে। প্রশাসন কর্তৃক নির্দেশনা মেনে উরসের কার্যক্রম সম্পন্ন করা হবে।’ আলফাডাঙ্গা থানা অফিসার ইনচার্জ মো. আবু তাহের বলেন, ‘উরস চত্বরে পর্যাপ্ত সিসি ক্যামেরা স্থাপনের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এছাড়াও সার্বিক পরিস্থিতি সর্বক্ষণ মনিটরিং করা হবে।

 

সংবাদটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই ক্যাটাগরির আরো সংবাদ
© পদ্মা বাংলা মিডিয়া হাউজের একটি প্রতিষ্ঠান
Design & Developed By JM IT SOLUTION